আমেরিকা তার দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের নানা সুযোগ দিয়ে থাকে। ফেলোশিপ ও বৃত্তির মাধ্যমে এ সুযোগ মেলে, যাতে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষায় উন্নতি করতে পারে। কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড স্টাডি (ইয়েস) প্রোগ্রাম (YES Program Bangladesh) তেমনি একটি সুযোগ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অর্থায়নে পরিচালিত হয়।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রোগ্রামে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আগ্রহী, তারা অনলাইনে এ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবে।
ইয়েস প্রোগ্রাম এ আবেদনের যোগ্যতা ও নিয়মাবলি
প্রোগ্রামটির আওতায় মূলত বাংলাদেশের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। তবে আবেদন করার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত রয়েছে। নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে সেগুলো দেওয়া হলো:
যোগ্যতার শর্ত | বিবরণ |
---|---|
বয়সসীমা | ২০২৫ সালের ১৫ আগস্টে বয়স হতে হবে ১৫-১৭ বছরের মধ্যে; জন্মসাল ১৫ আগস্ট ২০০৮ থেকে ১৫ আগস্ট ২০১০ |
শিক্ষাস্তর | বাংলাদেশি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম, দশম বা একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত হতে হবে |
ফলাফল | বার্ষিক পরীক্ষায় গড়ে ‘বি’ গ্রেড বা ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে |
শিক্ষা অবস্থা | গত তিন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষায় বিরতি বা কোনো শ্রেণিতে পুনরাবৃত্তি না থাকা |
বিদেশে বসবাস | আবেদনকারী গত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করলে আবেদন করতে পারবে না |
ইংরেজি দক্ষতা | ইংরেজি ভাষায় ভালো কথা বলার এবং লেখার সক্ষমতা থাকতে হবে |
ভিসা | মার্কিন জে-১ ভিসা পাওয়ার যোগ্য হতে হবে (যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তাদের জে-১ ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই) |
ইয়েস প্রোগ্রামের সুবিধাসমূহ
ইয়েস প্রোগ্রামের মূল আকর্ষণ হলো এতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিমানভাড়া, মার্কিন ভিসা ফি, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা-খাওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন ও মাসিক হাতখরচ (১২৫ ডলার)। মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগ এসব ব্যয়ভার বহন করে। শিক্ষার্থীকে যাতায়াত ও সেখানে থাকার জন্য আলাদা খরচ বহন করতে হবে না।
নিচে প্রোগ্রামের আওতায় পাওয়া সুবিধাগুলো তালিকাভুক্ত করা হলো:
- বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যাওয়া-আসার বিমানভাড়া
- ভিসা ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ
- মাসিক হাতখরচ ১২৫ ডলার
- স্বাস্থ্যবিমা
- আমেরিকান হোস্ট ফ্যামিলির সঙ্গে থাকার সুযোগ
প্রতিটি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে একটি আমেরিকান হোস্ট ফ্যামিলির সঙ্গে বসবাস করবে। শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো অঙ্গরাজ্যে থাকতে পারে, যা প্রোগ্রামের প্লেসমেন্ট সংস্থা নির্ধারণ করে। এই হোস্ট ফ্যামিলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে এবং দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতির সঙ্গে মিল খুঁজে পাবে।
প্রোগ্রাম শেষে দেশে ফেরা বাধ্যতামূলক
ইয়েস প্রোগ্রামের নিয়মাবলি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা এক বছরের শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফিরে আসবে। প্রোগ্রাম শেষে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, কেননা এটি প্রোগ্রামের নিয়মাবলির বিরুদ্ধে। নিয়ম ভঙ্গ করলে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে ২০২২, ২০২৩, এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নম্বরপত্র জমা দিতে হবে। আবেদন সম্পূর্ণভাবে বিনা খরচে করা যাবে।
এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে এক বছর অধ্যয়ন ও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। গত ২০০৪ সাল থেকে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এ সুযোগ পেয়ে উপকৃত হয়েছে।
২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড স্টাডি (ইয়েস) প্রোগ্রাম আবেদন গ্রহণ শুরু করেছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পাবে। শিক্ষার্থীরা নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা লাভ করতে পারবেন। এটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশেষ উদ্যোগ।
ইয়েস প্রোগ্রাম এ আবেদন পদ্ধতি
প্রথমে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। প্রার্থীকে ইয়েস প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে গিয়ে (www.iearnbd.org) প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আপলোড করতে হবে। তবে কাগজপত্রের সত্যায়ন বাধ্যতামূলক। প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার অথবা স্কুলের কর্মকর্তার কাছ থেকে কাগজপত্রগুলো সত্যায়িত করতে হবে। তারপর সেগুলো স্ক্যান করে অনলাইন আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
আবেদন সম্পন্ন করার পর প্রাথমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি তালিকা তৈরি করা হবে। যোগ্য প্রার্থীদের ফোন ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। এটি তিন মিনিটের সংক্ষিপ্ত একটি ইন্টারভিউ, যা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক যোগ্যতা মূল্যায়ন করবে। নির্বাচিত প্রার্থীরা ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে আরও কয়েকটি ধাপ পাড়ি দিতে হবে।
প্রাথমিক বাছাই ও ইএলটিআইএস (ELTIS) পরীক্ষা
ফোন ইন্টারভিউয়ের পর নির্বাচিত প্রার্থীদের ইএলটিআইএস (ELTiS) পরীক্ষা এবং ইন-ক্লাস প্রবন্ধ-রচনা পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ইএলটিআইএস পরীক্ষাটি দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ লিসেনিং, যা ২৫ মিনিটের। দ্বিতীয় অংশ রিডিং, যার জন্য ৪৫ মিনিট সময় নির্ধারিত। প্রার্থীদের শ্রবণশক্তি এবং পঠন দক্ষতার ভিত্তিতে এই পরীক্ষাটি নেওয়া হয়।
ইএলটিআইএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ইন-ক্লাস প্রবন্ধ রচনা করতে হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীকে তিনটি ভিন্ন প্রবন্ধ লিখতে হবে। প্রতিটি প্রবন্ধের জন্য ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে। এটি প্রার্থীদের সৃজনশীলতা এবং ইংরেজি লেখার দক্ষতা যাচাই করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
চূড়ান্ত আবেদন এবং সাক্ষাৎকার
যারা ইএলটিআইএস এবং প্রবন্ধ রচনায় ভালো করবে, তারা চূড়ান্ত আবেদন জমা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এই চূড়ান্ত আবেদনের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানো হবে। যেসব প্রার্থী চূড়ান্ত আবেদনপত্র জমা দেবে, তাদের চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই সাক্ষাৎকারে সফল হলে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
প্রসেস সম্পূর্ণ করার জন্য ইয়েস প্রোগ্রাম জানুয়ারিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। প্রোগ্রাম থেকে চূড়ান্ত এবং অল্টারনেট প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করা হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে এনহ্যান্সমেন্ট অ্যাকটিভিটি, পিডিও এবং ট্রাভেল ওরিয়েন্টেশনে অংশ নেবে। উল্লেখ্য, এ ওরিয়েন্টেশনগুলো বাধ্যতামূলক।
আবেদনের শেষ সময়
ইয়েস প্রোগ্রামে আবেদনের (YES program registration) শেষ তারিখ আগামী ২৭ অক্টোবর ২০২৪। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশাবলি ইয়েস প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে মেইলে যোগাযোগও করা যাবে।
ইয়েস প্রোগ্রাম একাডেমিক এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ করে দেয়। যারা এই সুযোগ নিতে চায়, তাদের এই সুযোগ গ্রহণ করতে দেরি করা উচিত নয়।