মানুষের জীবনে পেশার গুরুত্ব অপরিসীম। পেশা শব্দটি ফরাসি শব্দ থেকে এসেছে, যার আভিধানিক অর্থ হলো বৃত্তি বা কাজ। এটি জীবিকা নির্বাহের একটি উপায়। মানুষ তার দক্ষতা, শ্রম, এবং জ্ঞান ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। পেশা বলতে কায়িক শ্রম নির্ভর কাজ যেমন দিনমজুরি, রিকশা চালনা, কিংবা মানসিক দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল কাজ যেমন চিকিৎসা, আইনজীবী বা শিক্ষকতা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়।
সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ
সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা, যা মানুষের আর্থ-সামাজিক সংকট সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আধুনিক শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে সমাজে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সনাতন সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের পরিবর্তে আধুনিক পেশাভিত্তিক সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমাজকর্ম একটি স্বীকৃত পেশায় পরিণত হয়। এ সময়ে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতার ব্যাপক অনুশীলন শুরু হয় এবং নতুন নতুন সমস্যার সমাধান কৌশল উদ্ভাবিত হয়। এর ফলে সমাজকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে মর্যাদা ও গুরুত্ব লাভ করে। এটি একটি দায়িত্বপূর্ণ পেশা, যেখানে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমস্যার সমাধানে কাজ করা হয়।
পেশার বৈশিষ্ট্য
একটি পেশা সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। নিচে একটি সারণীর মাধ্যমে পেশার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
বৈশিষ্ট্য | ব্যাখ্যা |
---|---|
সার্বক্ষণিক কর্ম | পেশার ক্ষেত্রে এটি একটি পূর্ণকালীন দায়িত্ব। |
বিশেষায়িত শিক্ষা | প্রতিটি পেশার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। |
দায়িত্ব ও নৈতিকতা | পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব ও নৈতিক আচরণ জরুরি। |
সেবামূলক মনোভাব | পেশায় সেবা প্রদানের মানসিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। |
সমাজকর্মের পেশাগত দিক
সমাজকর্ম একটি বিশেষায়িত পেশা যা মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এটি শুধু আর্থিক লাভের জন্য নয় বরং সেবামূলক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। সমাজকর্মে একটি দায়িত্বশীল মনোভাব এবং নৈতিকতার গুরুত্ব রয়েছে। যেমন, একজন সমাজকর্মী দরিদ্র, অসহায়, এবং সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। সমাজকর্মে দক্ষতা, জ্ঞান, এবং অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন ঘটে। এটি সমাজের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে এবং সমস্যার সমাধান কৌশল উদ্ভাবন করে। উদাহরণস্বরূপ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদানে সমাজকর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম। সমাজকর্ম পেশার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে:
- পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব।
- সীমিত আর্থিক সংস্থান।
- সামাজিক বাধা ও সংস্কার।
- পেশার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব।
তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করার জন্য সমাজকর্মীদের আরও প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হতে হবে এবং সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
পেশা কাকে বলে ও পেশার উদাহরণ
পেশা শুধু ব্যক্তির আয়ের উৎস নয়, এটি তার সেবামূলক মনোভাব এবং সমাজে অবদান রাখার একটি মাধ্যম। উদাহরণস্বরূপ, চিকিৎসক, আইনজ্ঞ, শিক্ষক, প্রকৌশলী, এবং সমাজকর্মী। চিকিৎসকরা রোগীর শারীরিক সমস্যার সমাধান করেন, আইনজ্ঞরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন, শিক্ষকরা শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান ছড়িয়ে দেন, এবং সমাজকর্মীরা মানুষের সমস্যাগুলি সমাধান করেন।
পেশা মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু অর্থ আয়ের মাধ্যম নয় বরং সমাজে মানুষের ভূমিকা ও দায়িত্ববোধের পরিচয়। সমাজকর্ম পেশা আমাদের শেখায় কীভাবে মানুষের সমস্যার সমাধানে সহায়ক হওয়া যায়। এটি একটি সেবামূলক পেশা হওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজের উন্নয়নে সমাজকর্মীদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। মানুষের কল্যাণ এবং সমাজের উন্নয়নে পেশাজীবীদের সঠিক ভূমিকা পালন করা জরুরি। তাই, পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, এবং নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।