তুরস্ক সরকার প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম আয়োজন করে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষেও এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়াশোনার জন্য তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই স্কলারশিপের মাধ্যমে তুরস্কের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ নিতে পারবেন। আবেদন করার শেষ তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি।
তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। বিশেষ করে মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামগুলো খুবই জনপ্রিয়। পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্রেও তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবছর ৫০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন।
তুরস্কে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ২০২৫–২৬
তুরস্ক সরকারের এই স্কলারশিপ শুধু বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগই দেয় না, বরং শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের নানা খরচও বহন করে। তুরস্কে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, তা হলো:
- সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে।
- শিক্ষার্থীরা মাসিক উপবৃত্তি পাবেন।
- স্নাতক পর্যায়ে প্রতি মাসে ৭০০ তুর্কি লিরা।
- স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রতি মাসে ৯৫০ তুর্কি লিরা।
- পিএইচডি পর্যায়ে প্রতি মাসে ১৪০০ তুর্কি লিরা।
- গবেষণার জন্য প্রতি মাসে ৩০০০ তুর্কি লিরা।
- আবাসনের সুবিধা দেওয়া হবে। স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া পুরোপুরি বিনামূল্যে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বছর থেকে মাসে ৫৫০ লিরা প্রদান করে থাকতে পারবেন।
- স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা পাবেন।
- তুরস্কে যাতায়াতের বিমান ভাড়া বহন করা হবে।
- এক বছরের বিনামূল্যে তুর্কি ভাষা কোর্স করার সুযোগ থাকবে।
- যারা ভালো ফলাফল করবে, তাদের ইউরোপের যেকোনো দেশে ১ সেমিস্টার পড়ার সুযোগ থাকবে।
তুরস্কে উচ্চশিক্ষার আবেদনের যোগ্যতা
তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপের জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হয়।
১. তুরস্কের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভর্তি থাকা যাবে না। ২. বয়সের শর্ত রয়েছে:
- স্নাতকের জন্য সর্বোচ্চ ২১ বছর।
- স্নাতকোত্তরের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।
- পিএইচডির জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।
- গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ বছর। ৩. শিক্ষাগত যোগ্যতায় কিছু শর্ত রয়েছে:
- স্নাতকে মেডিসিন ও ফার্মেসির মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এইচএসসিতে ৯০% নম্বর পেতে হবে। অন্যান্য বিষয়ে এইচএসসিতে কমপক্ষে ৭০% নম্বর থাকতে হবে।
- স্নাতকোত্তরে আবেদনের জন্য স্নাতকে ৭০% নম্বর প্রয়োজন।
- পিএইচডিতে আবেদনের জন্য স্নাতকোত্তরে ৭৫% নম্বর থাকতে হবে। ৪. আবেদনকারীর ইংরেজি ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে। টোফেল বা আইইএলটিএস সার্টিফিকেট থাকলে তা বাড়তি সুবিধা দেবে।
তুরস্কে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয় নথি
আবেদনকারীদের বিভিন্ন নথি প্রস্তুত রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে:
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা)।
- পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদের স্ক্যান করা কপি।
- সব পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট।
- একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট।
- দুটি রেফারেন্স লেটার।
- একটি মোটিভেশনাল লেটার।
- স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি)।
- একটি রিসার্চ প্রপোজাল (পিএইচডি প্রার্থীদের জন্য)।
- টোফেল, জিআরই ইত্যাদির সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
- এক্সট্রা কারিকুলার সার্টিফিকেট (যেমন: স্কাউট, রচনা প্রতিযোগিতা, বিএনসিসি)।
তুরস্কে উচ্চশিক্ষার আবেদনের প্রক্রিয়া
তুরস্ক সরকারের এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হবে অনলাইনে। আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট https://tbbs.turkiyeburslari.gov.tr/ এ যেতে হবে। বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে https://turkiyeburslari.gov.tr/ ওয়েবসাইটে। আবেদনপত্র পূরণের সময় প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করতে হবে।
তুরস্কের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ইউরোপের উন্নত অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম। তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা এবং শিক্ষার মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। তুরস্কে পড়াশোনা করার আরও কিছু কারণ হলো:
- আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা।
- তুলনামূলক কম খরচে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ।
- বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষায়িত কোর্স, যেমন: মেডিসিন, বায়োটেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত।
- গবেষণার সুযোগ এবং উন্নত ল্যাব সুবিধা।
- একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা।
তুরস্ক সরকারের ‘তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ’ উচ্চশিক্ষার জন্য একটি অনন্য সুযোগ। বিনামূল্যে পড়াশোনার পাশাপাশি আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা এবং গবেষণার জন্য প্রাপ্ত সুবিধা শিক্ষার্থীদের আর্থিকভাবে সাহায্য করে। যারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি সেরা সুযোগ হতে পারে। আবেদন করতে দেরি করবেন না। তুরস্কে পড়ার এই সুযোগ শিক্ষার্থীদের জীবন বদলে দিতে পারে।