শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজে শিক্ষকদের বদলি নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই নীতিমালা অনুসরণ করে, শিক্ষকরা শূন্যপদে বদলি আবেদন করতে পারবেন, তবে এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন হবে এবং এতে এনটিআরসিএ (জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (https://shed.gov.bd) শিক্ষকদের বদলি নীতিমালার প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। এটি মূলত এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য, যাদের বদলি প্রক্রিয়া অনলাইনে পরিচালিত হবে। স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই বদলি কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে এবং বদলি সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (মাউশি) নিষ্পত্তি করবেন।
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা ২০২৪
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) থেকে শিক্ষকদের বদলির জন্য কিছু শর্তাবলী রয়েছে যা শিক্ষকরা পূরণ করলে আবেদন করতে পারবেন। এসব শর্তাবলী হলো:
- শূন্যপদের চাহিদা: এনটিআরসিএ ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শূন্যপদের তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করবে।
- বদলির আবেদন: ১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে শিক্ষকরা অনলাইনে বদলি আবেদন করতে পারবেন।
- বদলি আদেশ: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলির আদেশ জারি হবে এবং ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষকরা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবেন।
- বদলি শর্ত: শিক্ষকগণ তাদের নিজ জেলায় বদলি আবেদন করতে পারবেন, তবে যদি নিজ জেলায় শূন্যপদ না থাকে, তাহলে তারা তাদের বিভাগে থাকা অন্যান্য জেলার শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন করতে পারবেন।
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি যোগ্যতা ও সময়সীমা
শিক্ষকরা প্রথম যোগদানের পর দুই বছর চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হলে বদলির আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে, যদি তারা বদলির মাধ্যমে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন, তবে তাদের অবশ্যই নতুন কর্মস্থলে ন্যূনতম দুই বছর কর্মে নিয়োজিত থাকতে হবে, তাহলেই তারা পরবর্তী বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
একজন শিক্ষক কর্মজীবনে সর্বোচ্চ দুইবার বদলি হতে পারবেন, তবে একজন শিক্ষিকা তিনবার বদলির সুযোগ পাবেন।
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি আবেদন প্রক্রিয়া
বদলি প্রক্রিয়ায় যদি একাধিক আবেদনকারীর মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবেদনগুলো যাচাই করা হবে। এই অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিচার অনুযায়ী প্রথমে জ্যেষ্ঠতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তারপর নারী আবেদনকারীকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং পরিশেষে দূরত্ব অনুযায়ী আবেদনকারীদের স্থান নির্বাচন করা হবে।
সিনিয়রিটি: চাকরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ থেকেই সিনিয়রিটি গণনা করা হবে। যদি একই উপজেলায় কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে, তাহলে তাদের কর্মস্থল থেকে কাঙ্ক্ষিত স্থানে দূরত্ব অনুযায়ী র্যাংকিং করা হবে। যদি বিভিন্ন উপজেলায় থাকে, তবে তাদের জেলা কেন্দ্রের সাথে কাঙ্ক্ষিত জেলার কেন্দ্রের দূরত্ব নির্ধারণ করা হবে।
দূরত্ব পরিমাপ: দূরত্ব পরিমাপের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মডেল অনুসরণ করা হবে।
বদলি প্রক্রিয়ায় যে সকল আবেদন সঠিকভাবে পূর্ণ হবে না বা যেগুলোর তথ্য অসম্পূর্ণ হবে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে না। যদি কোন আবেদনকারীর ইচ্ছাকৃত ভুল প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক বদলি
এনটিআরসিএ শূন্যপদ পূরণের জন্য শিক্ষকদের বদলির কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বদলি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, এনটিআরসিএ অবশিষ্ট শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ করবে। প্রতি বছর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে শুধুমাত্র এক জন শিক্ষক বদলি হতে পারবেন। এই বদলি নীতিমালা শিক্ষকদের জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যার মাধ্যমে তারা সহজেই তাদের পছন্দের কর্মস্থলে চলে যেতে পারবেন এবং এটি শিক্ষক সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষক বদলির আবেদনের প্রক্রিয়া ২০২৪ সালে সম্পূর্ণ নতুন রূপে সম্পন্ন হবে। এই প্রক্রিয়াটি ডিজিটালভাবে, অর্থাৎ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যা আরও দ্রুত এবং সহজ করে তুলবে বদলি কার্যক্রম। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন এবং বদলির প্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছ ও সহজ হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করবে, যা বদলির আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট ফরম্যাট নির্ধারণ করবে। ফলে শিক্ষকরা দ্রুত তাদের বদলি সম্পর্কিত তথ্য ও আবেদন করতে পারবেন।
বদলির প্রক্রিয়া ও সুবিধা
বদলির আবেদন জমা দেওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে বদলিকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান সংক্রান্ত সব তথ্য অনলাইনে ট্রান্সফার করা হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষক বদলির পরও তার এমপিও (শিক্ষক-কর্মচারী ভাতা) এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বজায় থাকবে। এছাড়া, তার চাকরির জ্যেষ্ঠতা বা সিনিয়রিটি আগের মতোই চলমান থাকবে, ফলে কোনো ধরনের আর্থিক ক্ষতি বা কর্মস্থলে উন্নতি বা অধিকার কমবে না। এটি শিক্ষকগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা, কারণ এটি তাদের আর্থিক অবস্থা এবং চাকরি সম্পর্কিত সব কিছু আগের মতোই রাখবে।
বিবিধ শর্তাবলী
শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়া একটি অধিকার নয়, বরং এটি একটি আবেদন প্রক্রিয়া। সুতরাং, শিক্ষকগণ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বদলি হতে চাইলে আবেদন করবেন, কিন্তু এটি কোনভাবে দাবি করা যাবে না। এর মানে হলো, বদলি প্রক্রিয়া কোনো শিক্ষককে অব্যাহতভাবে পাওয়ার অধিকার দেবে না। এছাড়া, বদলি হওয়া শিক্ষককে কোনো ধরনের টিএ বা ডিএ (ভাতা) প্রদান করা হবে না। বদলি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বদলিকৃত শিক্ষকের অবমুক্তি নিশ্চিত করবেন এবং তারপর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে।
বদলিকৃত শিক্ষককে তার পুরোনো প্রতিষ্ঠানে ১০ দিনের মধ্যে অবমুক্ত হতে হবে এবং তারপর ১০ দিনের মধ্যে নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষককে সময়ের অপচয় না হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানও এই যোগদানের তথ্য অনলাইনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, যেমন এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর মহাপরিচালককে অবহিত করবেন। এখানেও উল্লেখযোগ্য যে, অবমুক্তির দিন থেকে যোগদান পর্যন্ত সময়টুকু কর্মকাল হিসেবে গণ্য হবে।
২০২৪ সালের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা
২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য একটি নতুন বদলি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এই নীতিমালায় বদলি প্রক্রিয়ার নতুন নিয়মাবলী ও শর্তাবলী বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এই নীতিমালার মাধ্যমে তাদের বদলি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন এবং এতে তাদের সুবিধা ও অধিকার সবকিছু সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সুবিধাজনক ব্যবস্থা, যা তাদের কর্মজীবনে সহায়তা প্রদান করবে। ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে এটি আরও সহজ এবং দ্রুত করা সম্ভব হয়েছে, যা শিক্ষকদের জন্য একটি বড় ধরনের সুবিধা। বর্তমান বদলি নীতিমালা ২০২৪ শিক্ষকদের বদলি ও কর্মজীবনকে আরও সুসংগঠিত এবং পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করবে।