অধ্যবসায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। অন্য যে সকল রচনা পরীক্ষায় আসতে পারে, তাদের মধ্যে অধ্যবসায় অন্যতম। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রচনা বিষয়। আমরা আমাদের ব্লগ পোস্টে অধ্যবসায় রচনা সম্পর্কিত ২০টি মূল পয়েন্ট তুলে ধরেছি। এই ২০টি পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনাকে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে সাহায্য করবে।
প্রিয় পাঠক, যদি আপনি পরীক্ষায় অধ্যবসায় বিষয়ক রচনা ভালোভাবে লিখে ভালো নম্বর পেতে চান, তাহলে আমাদের ব্লগ পোস্টে উল্লেখিত ২০টি পয়েন্ট খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এতে আপনার রচনা আরও শক্তিশালী হবে এবং পরীক্ষায় আপনি ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবেন। অধ্যবসায় মানে হল কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য সহকারে কোনো কাজ চালিয়ে যাওয়া। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শুধু প্রতিভা নয়, বরং নিরন্তর চেষ্টা ও পরিশ্রমও খুব জরুরি। সফলতার পথে নানা বাধা আসতে পারে, কিন্তু অধ্যবসায় আমাদের সেই বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠার শক্তি দেয়। পৃথিবীর অনেক সফল মানুষ তাদের স্বপ্ন পূরণ করেছেন অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই। তারা বারবার চেষ্টা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন।
অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট
অধ্যবসায় শুধুমাত্র আমাদের জীবনে কোনো কাজের প্রতি মনোযোগ এবং সাধনা বাড়ায় না, এটি আমাদের ধৈর্যও শেখায়। যখনই আমরা ব্যর্থ হই, অধ্যবসায় আমাদের সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার চেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে। এটি আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং কোনো কাজের সফলতা অর্জনের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে। এই রচনা ৯ম, ১০ম, এসএসসি, এইচএসসি সহ সকল ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খুবই উপযোগী। এটি ২০ পয়েন্ট সম্বলিত এবং সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই বুঝতে পারে।
ভূমিকা
প্রতিটি মানুষের জীবনেই সফলতার জন্য প্রচেষ্টা থাকে। সফলতা অর্জনের পথ মোটেও সহজ নয়, তবে যারা সফল হতে চান, তারা তাদের অধ্যবসায় দিয়েই তা অর্জন করতে পারেন। জীবনে অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে, এবং কিছু ব্যর্থতাও হতে পারে, কিন্তু যিনি তার চেষ্টা থামান না এবং সব কিছুর পরেও এগিয়ে যান, তিনি হচ্ছেন সফল। প্রত্যেকের জীবনে আলাদা লক্ষ্য থাকে এবং সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য অনেক সময় এবং পরিশ্রম দিতে হয়। তবে অনেক সময় প্রচেষ্টা করার পরও যখন লক্ষ্য পূর্ণ হয় না, তখন অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করা বন্ধ করে দেন। কিন্তু, যে ব্যক্তি জীবনের কোনো এক পর্যায়ে হাল ছাড়ে না, সে হয় সফল। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, জীবনে যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সকল ব্যর্থতা ও বাধাকে অতিক্রম করতে হবে, ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে; এই প্রচেষ্টার নামই হচ্ছে অধ্যবসায়।
অধ্যবসায় কী
অধ্যবসায় বলতে বুঝায় অবিরাম প্রচেষ্টা। যখন কোনো ব্যক্তি তার লক্ষ্য পূরণের জন্য থেমে না গিয়ে অবিচলভাবে কাজ করে, তখনই তাকে অধ্যবসায়ী বলা হয়। জীবনে কিছু ভালো পেতে হলে, তা কখনো সহজে পাওয়া যায় না। তার জন্য অধ্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে ব্যক্তি যত বেশি ধৈর্য ধারণ করে এবং তার লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে, সে তত বেশি সফলতার দিকে এগিয়ে যায়। অধ্যবসায় হচ্ছে একজন ব্যক্তির মানসিক শক্তি। সফলতার পথে যতই বাধা আসুক না কেন, একজন অধ্যবসায়ী তার সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যায়। মানসিক শক্তি যত বেশি থাকে, তত বেশি সে অধ্যবসায়ী।
কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ তার এক বিখ্যাত কবিতায় বলেছেন:
“পারিব না এই কথাটি বলিও না আর,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।”
এই কথাগুলির মাধ্যমে তিনি আসলে বোঝাতে চেয়েছেন যে, যদি কোনো কাজ একবারে না হয়, তাহলে তা বারবার চেষ্টা করলেই সফলতা আসবে। তাই, অধ্যবসায় একটি অপরিহার্য গুণ।
অধ্যবসায় কীভাবে সফলতার পথে সহায়ক
যে ব্যক্তি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধ্যবসায় প্রদর্শন করে, তার জীবন সহজে সফল হতে পারে। জীবনে নানা বাধা আসবে, কিন্তু যারা তাদের লক্ষ্য স্থির রেখে কাজ করতে থাকে, তারা কখনও থামতে পারে না। তাদের এই অধ্যবসায় তাদেরকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়। বিশ্বের সমস্ত বড় বড় সফল মানুষদের মাঝে এই গুণটি ছিল। যেমন বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, বা সমাজ সংস্কারকরা — তাদের সকলের সফলতার পিছনে অধ্যবসায় ছিল। যদি তারা অধ্যবসায় না দেখাতেন, তাহলে তারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারতেন না। অধ্যবসায় এমন একটি শক্তি, যা একজন ব্যক্তিকে তার বাধা পেরিয়ে অসাধ্য সাধনে সহায়তা করে।
অধ্যবসায় ও সফলতার সম্পর্ক
অধ্যবসায় হলো সফলতার চাবিকাঠি। জীবনে কোন কিছু অর্জন করতে হলে কখনোই সহজে তা পাওয়া যায় না। অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে যে সফলতা আসে, তা অভিন্ন। যারা নিজেদের কাজের প্রতি অবিচল থাকে এবং বারবার চেষ্টা করে, তারা এক সময় সফল হয়। বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, দার্শনিক, এমনকি বড় উদ্যোক্তাদেরও সফলতার পেছনে অধ্যবসায়ই প্রধান কারণ। বিজ্ঞানী থমাস এডিসন তাঁর শতাধিক বার ব্যর্থ হয়ে শেষে বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেছেন, যদি তিনি হাল ছেড়ে দিতেন, তাহলে পৃথিবী কখনো এই আবিষ্কার পেত না। তিনি তাঁর ব্যর্থতাকে অধ্যবসায় ও অধ্যয়ন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
অধ্যবসায়ের গুরুত্ব
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন:
“কেন পান্থ ক্ষান্ত হও, ভেরি দীর্ঘ পথ
উদ্যম বিহনে কার পুরো মনোরথ?”
এটি আমাদের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বোঝাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি। পৃথিবীতে সকল মানুষই কর্মরত থাকে, এবং কর্মের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে অধ্যবসায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যবসায় হলো সেই শক্তি যা আমাদের সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সফলতা পেতে হলে মাঝে মাঝে ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু এটি কোনোভাবেই আমাদের থামাতে পারে না। ব্যর্থতাই হলো সফলতার প্রথম সিঁড়ি। বিল গেটস একবার বলেছিলেন:
“জীবনে বড় ধাক্কা খাওয়া বা বাজে পরিস্থিতির শিকার হওয়াও সাফল্যের অন্যতম মূলমন্ত্র।”
অধ্যবসায় থাকলে, মানুষ অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে যা একদম অসম্ভব মনে হতে পারে। যারা বারবার ব্যথা বা দুঃখের পরেও থেমে না থেকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সংগ্রাম চালিয়ে গেছে, তারাই প্রকৃত অধ্যবসায়ী। এ কারণে মানব জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
ব্যক্তিগত জীবনে অধ্যবসায়
জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমাদের অনেক বাধা ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এগুলোর সমাধান পেতে অধ্যবসায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যারা কোনো কিছু করার চেষ্টা না করে সহজে হাল ছেড়ে দেয়, তারা অধ্যবসায়ী নয়। আর যারা দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় তাদের লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকে, তারা প্রকৃত অধ্যবসায়ী। অধ্যবসায় না থাকলে, প্রতিটি পদক্ষেপেই হোঁচট খাওয়া ছাড়া কিছুই হয় না।
ছাত্র জীবনে অধ্যবসায়
ছাত্রজীবন আমাদের ভবিষ্যত জীবনের প্রস্তুতি। এই সময়ে অধ্যবসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা অর্জন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। শুধুমাত্র মেধা থাকলেই সফলতা আসে না। পড়াশোনায় মনোযোগী না হলে, মেধা একা কোনো কাজে আসে না। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। যখন একজন ছাত্র নিয়মিত অধ্যয়ন করে, তখন সে শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন করে না, তার জীবনও সাফল্যের দিকে এগিয়ে যায়। অনেক মেধাবী ছাত্র শিখতে যথেষ্ট চেষ্টা না করার কারণে জীবনে সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।
মানব সভ্যতায় অধ্যবসায়
আমাদের আজকের এই আধুনিক পৃথিবী আমাদের পূর্বপুরুষদের অধ্যবসায়ের ফল। অতীতে মানুষ গুহায় বা বন-জঙ্গলে বাস করত, এবং তখন কোনো সভ্যতা ছিল না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের প্রচেষ্টায় সভ্যতার বিকাশ ঘটে। আজ যেসব জিনিস আমাদের কাছে রয়েছে, তা একসময় মানুষের স্বপ্ন ছিল। এই মানব সভ্যতার উন্নতি কোনও সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু অবিরাম পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষ এটি অর্জন করেছে।
মনীষীদের জীবনে অধ্যবসায়
বিশ্বের মহান ব্যক্তিত্বদের জীবনেও অধ্যবসায় ছিল তাদের সফলতার মূল চাবিকাঠি। যেমন মহাকবি ফেরদৌসী তার অমর মহাকাব্য “শাহনামা” লেখার জন্য তিরিশ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আর জ্ঞানেন্দ্র মোহন দাশ, যিনি বিশ বছর ধরে কাজ করে “বাংলা ভাষার অভিধান” রচনা করেছিলেন। আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ, যারা সহায়তা ছাড়া প্রায় দু হাজার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের জীবনের অধ্যবসায়কে স্মরণ করতে হয়। এমনকি স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুসও ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হলেও থামেননি এবং শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হন। এছাড়া, বিজ্ঞানী নিউটনও তার বিজ্ঞানের অবদান রেখেছেন দীর্ঘকাল ধরে একনিষ্ঠ সাধনা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাদের এই পরিশ্রমী জীবনই আমাদের শিক্ষা দেয় যে, অধ্যবসায় ছাড়া বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়।
অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ সাফল্য
অধ্যবসায় হলো সেই শক্তি যা আমাদের দৃষ্টিকে চমৎকার ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। জীবনযুদ্ধে সাফল্য অর্জন করতে হলে আমাদের ধৈর্য ও পরিশ্রমের উপর নির্ভর করতে হয়। অধ্যবসায় থাকার কারণে মানুষের জীবন সহজতর হয় না, তবে এর মাধ্যমেই আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করি। তাই আমাদের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব কখনোই কমে না। যে যত কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দেখায়, তারই সামনে সাফল্যের পথ উন্মুক্ত হয়।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়
আমাদের জাতীয় জীবনের উন্নতি এবং সগৌরব প্রতিষ্ঠায় অধ্যবসায়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অধ্যবসায় শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, জাতীয় জীবনে ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি জাতির সফলতা ও অগ্রগতি নির্ভর করে তার প্রতিটি নাগরিকের আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের ওপর। এই কারণেই, একটি জাতির বৃহত্তর কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে, প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে অধ্যবসায়ের গুণাবলী থাকা অত্যন্ত জরুরি।
বিজ্ঞানে অধ্যবসায়
বিশ্বের সকল ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম, তবে বিজ্ঞানে এর ভূমিকা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞান কোনো সহজ বিষয় নয়, বরং এটি অবিরাম অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ এগিয়ে যায়। যত বড় বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বা প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছে, তার পেছনে আছেন বিজ্ঞানীরা যারা দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এটি সম্ভব করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান যুগে আমরা যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করি, তা অতীতে এমন ছিল না। বৈজ্ঞানিকরা তাদের পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে বিশ্বে নতুন নতুন আবিষ্কার করে চলেছেন। তাই, বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে আমরা শিখতে পারি যে অধ্যবসায় কখনও ব্যর্থ হয় না, বরং এটি সাফল্যের পেছনে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
অধ্যবসায়ের মূল্য
মানুষের জীবনে অধ্যবসায়ের মূল্য অত্যন্ত বড়। জীবনের যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি বা বিপদই আসুক না কেন, অধ্যবসায়ী মানুষ সেগুলোর মোকাবিলা করতে সক্ষম। যেমন বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ভূমিধস, নদী ভাঙন ইত্যাদি প্রকট সমস্যা, কিন্তু মানুষ এসবের সঙ্গে সংগ্রাম করে এগিয়ে যেতে সক্ষম। এটি সম্ভব হয়েছে তাদের দৃঢ় মনোবল, সাহসিকতা এবং অধ্যবসায়ের কারণে। অধ্যবসায়ের মূলমন্ত্র হলো সাহস এবং আত্মবিশ্বাস, যা মানুষকে প্রতিটি বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার শক্তি দেয়।
অধ্যবসায় এবং প্রতিভা
অনেকে বিশ্বাস করেন যে, সফলতা শুধু প্রতিভার উপর নির্ভর করে। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। কোনো মানুষের মধ্যে যদি প্রতিভা থাকে, তবে তার মধ্যে যদি অধ্যবসায় না থাকে, তবে সে তার প্রতিভা কখনও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবে না। এটি একটি সাধারণ ধারণা যে, শুধুমাত্র প্রতিভাবান ব্যক্তিরাই সফল হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায়ই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। প্রতিভা সফলতার পেছনে অবদান রাখলেও, তাকে পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালিত করা হয়।
সাফল্যের চাবিকাঠি
অধ্যবসায় ছাড়া সফলতা কখনোই অর্জন করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত জীবনে, শিক্ষাজীবনে, অথবা কোনো ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটি শুধু একজন ব্যক্তির সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, বরং জাতীয় উন্নতিরও অন্যতম প্রধান উপাদান। আমরা যদি নজর করি, বিশ্বে যেসব বড় বড় মনীষী, বিজ্ঞানী এবং সফল উদ্যোক্তা আছেন, তারা সবাই কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। তাই অধ্যবসায়কে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি সাফল্যের সবচেয়ে বড় উপাদান।
অধ্যবসায়ের চর্চা
অধ্যবসায় একটি শখ বা আগ্রহের বিষয় নয়, এটি একটি অভ্যাস যা চর্চার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। এই চর্চার মাধ্যমে একজন মানুষ তার জীবনের কঠিন বাধাগুলো অতিক্রম করে সফলতা অর্জন করতে পারে। এটি কখনোই সহজ নয়, তবে অধ্যবসায়ের চর্চা না করলে, তা অর্জন করা সম্ভব হয় না। যেমন আমেরিকার একজন সফল উদ্যোক্তা আর্নল্ড গ্লাসগো বলেছিলেন, “সাফল্যের আগুন একা একা জলে না, এটা তোমাকে নিজ হাতে জ্বালাতে হবে।” তাই, অধ্যবসায়ের চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের জীবনের সফলতার দিক নির্দেশনা দেয়।
অধ্যবসায়হীন মানুষের পরিণাম
মানব জীবনে সফলতা অর্জন করা খুবই সহজ নয়। অনেক মানুষ কোন কাজে প্রথমে সফল হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু শেষে অধ্যবসায়ের অভাবে তারা তা শেষ করতে পারে না। একজন মানুষের জীবনে যদি অধ্যবসায় না থাকে, তবে সে কখনোই সফল হতে পারবে না। কেননা, প্রতিটি সফলতার পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং অধ্যবসায়। অধ্যবসায় না থাকার কারণে অনেকেই ব্যর্থ হন। অ্যাপেল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস বলেছিলেন-
“রাতারাতি সাফল্য কিছুই নেই। মনোযোগ দিয়ে দেখুন, সব সাফল্যই অনেক সময় নিয়ে আসে।”
অধ্যবসায় এবং সফলতা
যার মধ্যে অধ্যবসায় থাকে, তার জীবনে সফলতা আসা নিশ্চিত। পৃথিবীতে যত বড় বড় ব্যক্তি এসেছে, তারা তাদের কাজের মাধ্যমে এমন কিছু রেখে গেছেন যা তাদের মৃত্যুর পরেও মানুষ মনে রাখে। তারা হয়তো আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাদের কাজ এবং কীর্তি আজও আমাদের মাঝে জীবিত। সাফল্যের চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে অধ্যবসায়। যখনই কারো মধ্যে অধ্যবসায় থাকে, তখনই সে কোন না কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে পারে।
অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাস
অধ্যবসায়ের পাশাপাশি সফলতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো আত্মবিশ্বাস। যদি আপনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখেন যে আপনি পারবেন, তবে জীবনে কোন কাজই অসম্ভব মনে হবে না। যারা সফল হয়েছেন, তারা সবাই নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন, বাধা-বিপত্তি পার হয়ে সামনে এগিয়েছেন। বিশ্বের অনেক বড় বড় ব্যক্তির সাফল্যের পেছনে আত্মবিশ্বাসের ভূমিকা ছিল। উদাহরণ হিসেবে, বিল গেটস যখন কলেজ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন তার শিক্ষকরা মনে করেছিলেন সে আর কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু তিনি আজ বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং মাইক্রোসফট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।
অধ্যবসায়ের শিক্ষা
জীবনে ব্যর্থতা আসবেই, এমনটা প্রত্যাশিত। ব্যর্থতা আমাদের পথচলার এক অংশ, কিন্তু যারা ব্যর্থতার পরও হাল ছাড়েন না, তারা সফলতা অর্জন করতে পারেন। যাদের মধ্যে অধ্যবসায় থাকে, তারা সব বাধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। উন্নত দেশগুলোর মানুষ এবং সফল ব্যক্তিদের জীবন দেখলে দেখা যায়, প্রত্যেকেই তাদের সফলতার পথে অধ্যবসায়ের উপর ভরসা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা তার এক ভাষণে বলেছিলেন-
“জীবনে সবচেয়ে বড় গৌরব হচ্ছে কখনো না পড়ে যাওয়া, বরং প্রতিবার পড়ে ওঠা।”
উপসংহার
জীবনে সফলতা লাভ করা এবং জাতিকে গর্বিত করার জন্য অধ্যবসায়ের বিকল্প কিছুই নেই। যখন কেউ তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে, তখন কোন বাধাই তাকে থামাতে পারে না। অধ্যবসায়ী মানুষ একদিন না একদিন সফলতা অর্জন করেই থাকে। প্রতিটি সফল জীবন এক ধরনের অধ্যবসায়ের প্রমাণ। তাই, ছোটবেলা থেকেই প্রত্যেকের উচিত এই মহৎ গুণটি অর্জন করা।