বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির নাম কি অনেক পরিক্ষাতেই এই প্রশ্ন আসে। আর তাই আমি এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির নাম ও তার কর্ম উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নির্বাচনের ঘটনা দেশের মানুষের মাঝে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর জীবনের নানা অধ্যায়, কর্মজীবন এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান দেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করেছে। চলুন এই প্রবন্ধে তাঁর জীবনের প্রধান দিকগুলো বিশদভাবে জানার চেষ্টা করি।
বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির নাম কি
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা জেলার শিবরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শরফুদ্দিন আনছারী এবং মাতা খায়রুন্নেসা। শৈশব থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং শিক্ষার প্রতি উৎসাহী ছিলেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পাবনার স্থানীয় স্কুল থেকে। ১৯৬৬ সালে পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বিএসসি এবং ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৫ সালে পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন ছিল একান্তভাবে নিষ্ঠাবান ও অধ্যবসায়পূর্ণ।
বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হলেন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন
বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। তিনি ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল এ পদে শপথ নেন। তাঁর আগে রাষ্ট্রপতি ছিলেন মো. আবদুল হামিদ। মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পরবর্তী পাঁচ বছর।
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পাবনার স্থানীয় স্কুলে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এছাড়া, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেন।
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। তিনি একজন বিচারক, নির্বাচন কমিশনার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের পক্ষে কাজ করে গেছেন। এ কারণে তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা অনেক বেশি।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের মূল দায়িত্ব হবে দেশের সংবিধান অনুযায়ী কাজ করা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হলেও তাঁর ক্ষমতা মূলত সাংবিধানিক। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়া দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, তাঁর অভিজ্ঞতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জনগণও আশাবাদী যে, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
টেবিলচিত্র: মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের জীবনী
তথ্য | বিবরণ |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৯, পাবনা |
শিক্ষা | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আইন |
পূর্ব পদ | বিচারক, নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনার |
শপথ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৩ |
রাষ্ট্রপতি নম্বর | ২২তম |
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কেমন উন্নতি করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে তাঁর প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনেক।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কর্মজীবন বহুমুখী। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। ১৯৮০ থেকে দুই বছর তিনি দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন। এরপর আইন পেশায় যোগ দেন এবং শুরুতে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগদান করেন এবং মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বিচারকাজে দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতিশীল মনোভাব তাঁকে সবার কাছে একজন আদর্শ বিচারক হিসেবে তুলে ধরে। ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন-এর মহাসচিব নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ পদে অবসর গ্রহণ করেন।
২০১১ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৬ সালে এ পদ থেকে অবসরে যান। তাঁর কর্মজীবনে সততা এবং দক্ষতা সবসময়ই প্রধান গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ব্যক্তিগত জীবন

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর রেবেকা সুলতানার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ছিলেন এবং যুগ্ম-সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তাঁদের একমাত্র পুত্র মো. আরশাদ আদনান (রনি)।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু মুক্তিযুদ্ধে অবদান
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ। তিনি পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল তিনি ভারতে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকা ছিল সাহসিকতা এবং দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
রাজনৈতিক জীবন

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং ১৯৭৪ সালে তিনি পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। তাঁর রাজনীতি জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও নির্ভীকভাবে এগিয়ে যাওয়া।
সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় পরিষদে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তাঁকে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়।
বিষয় | তথ্য |
---|---|
জন্ম | ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৯, পাবনা, বাংলাদেশ |
শিক্ষাগত যোগ্যতা | মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) এবং এলএলবি (শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ) |
মুক্তিযুদ্ধ | পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক |
কর্মজীবন | বিচারক, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার |
ব্যক্তিগত জীবন | স্ত্রী রেবেকা সুলতানা, এক পুত্র |
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের দায়িত্ব হবে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থেকে জাতীয় ঐক্য এবং সংবিধান রক্ষা করা। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে এ গুরুদায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে বলে দেশের জনগণের বিশ্বাস।
শেষ কথা
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর জীবন, কর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের অবদান বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। তাঁর শিক্ষা, পেশা, রাজনৈতিক জীবন এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব সবকিছুই প্রমাণ করে যে তিনি একজন দক্ষ এবং প্রতিশ্রুতিশীল নেতা। আশা করা যায়, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। প্রিয় বন্ধুরা, আপনি হোয়াটসয়াপ বিডিএর শিক্ষা নিউজে সাধারনজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের মূলপাতা ভিজিট করুন।