Monday, December 23, 2024
বাড়িলেখাপড়াবাংলা রচনাআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা Class 4

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা Class 4

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের গর্বের দিন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালিরা জীবন দিয়েছিল। এদিনে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে শহীদ হন। তাদের এই আত্মত্যাগের কারণেই আমরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে এই দিনটি সারা বিশ্বে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানানোর জন্য পালিত হয়। এই দিনটি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ দেয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা Class 4

আমরা প্রতি বছর এ দিনটিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। স্কুল-কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, রচনা প্রতিযোগিতা, এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আমাদের উচিত মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নতুন প্রজন্মকে ভাষার গুরুত্ব বোঝানো। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভাষার জন্য ভালোবাসা ও ত্যাগের গল্প। এই দিনটি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক এবং ঐতিহ্যের গৌরব।

ভূমিকা

একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে এক গভীর চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক। এটি এমন একটি দিন, যেদিন বাঙালি জাতি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল। একুশের এই আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আমাদের বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। এটি শুধু একটি দিন নয়; এটি মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার এবং জাতিগত ঐক্যের একটি উদাহরণ।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাকিস্তানের শাসনামলে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অধিকাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলত। বাংলাভাষীদের ওপর এই অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার ফলে সারা পূর্ব বাংলায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তা প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ বাংলার পক্ষে বিক্ষোভ শুরু করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ও সাধারণ মানুষ মিলে এক বিশাল আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলি চালায়, যাতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। এই ত্যাগের ফলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার।

আরও জানুন:  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রচনা ২০ পয়েন্ট - সহায়ক।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পেছনে দুই প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালামের অবদান অনস্বীকার্য। তারা ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে চিঠি পাঠিয়ে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় এই প্রস্তাব ইউনেস্কোতে পেশ করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা বিশ্বে এটি পালন শুরু হয়।

একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায়। এই স্বীকৃতি শুধু বাঙালির জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি সম্মানের বিষয়। এটি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং ভাষার বৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য

ভাষা শুধু মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক। প্রতিটি ভাষা নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতা বহন করে। ইউনেস্কোর মতে, মাতৃভাষা শিক্ষা কেবল ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য নয়, বরং এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই বিষয়গুলোকে সবার সামনে তুলে ধরে।
এই দিবসের মূল বার্তা হলো, প্রতিটি ভাষা সমান মর্যাদার অধিকারী এবং সেগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জাতির গর্ব ও শক্তির প্রতীক।

একুশের শিক্ষা

একুশে ফেব্রুয়ারির শিক্ষা হলো, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা একটি জাতির ঐক্য ও অগ্রগতির ভিত্তি। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা শিখেছি, ভাষার অধিকার রক্ষার সংগ্রাম শুধু একটি জাতির জন্য নয়; এটি সকল ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি উদাহরণ। ভাষার প্রতি ভালোবাসা জাতির সংস্কৃতি এবং ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য। একুশ আমাদের শিখিয়েছে যে, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

আরও জানুন:  স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট - সহায়ক।

উপসংহার

একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের একটি অমূল্য অধ্যায়। এই দিনটি শুধু ভাষার জন্য ত্যাগের স্মরণ নয়, এটি মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার একটি প্রতীক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশের স্বীকৃতি বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের জন্য গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করে, ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং ত্যাগ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। আজ সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মাতৃভাষা কেবল একটি ভাষা নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের মূর্ত প্রতীক।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Anirban Roy (EDU)
Anirban Roy (EDU)https://www.whatsupbd.com/
হাই, আমি অনির্বান। আমি একজন প্রফেশনাল ব্লগ রাইটার। শিক্ষা সম্পর্কিত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
RELATED ARTICLES

জনপ্রিয় পোষ্ট

Recent Comments