বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) কার্যক্রমের উদ্বোধন এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হলো। ১ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত (মাসিক পেমেন্ট অর্ডারভুক্ত) স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতা পেতে শুরু করবেন।
ইএফটি পদ্ধতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন প্রদানে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা এবং সময়ের সাশ্রয় নিশ্চিত করা। শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে।
ইএফটিতে এমপিও শিক্ষকদের বেতন ডিসেম্বর ২০২৪
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ইএফটি উদ্বোধনকালে জানান, “শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ইএফটি পদ্ধতি শিক্ষকদের জন্য আরও সহজ এবং সময়োপযোগী বেতন প্রক্রিয়া আনবে।”
এবারের কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী প্রথম দিনেই তাদের বেতন-ভাতার মেসেজ পাবেন। এরপর ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আরও ১ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এই সুবিধার আওতায় আসবেন।
ইএফটির পূর্ণ কার্যক্রম শুরুর আগে কয়েকটি থানা ও উপজেলার শিক্ষকদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হয়। শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি শিক্ষকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।
ইএফটি যেভাবে কাজ করে
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে সরকারের নির্ধারিত সফটওয়্যার “আইবাস ডাবল প্লাস” ব্যবহার করা হয়। এই সফটওয়্যারে শিক্ষকদের নাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
এখানে একটি সংক্ষিপ্ত টেবিল চিত্র দেওয়া হলো:
ধাপ | প্রক্রিয়া |
---|---|
১. ডেটা এন্ট্রি | শিক্ষকদের তথ্য সফটওয়্যারে এন্ট্রি করা হয়। |
২. ডাটা যাচাই | তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা হয়। |
৩. ফান্ড স্থানান্তর | নির্ধারিত তারিখে শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। |
শিক্ষকদের জন্য সুবিধা
১. সময় বাঁচানো: আগে শিক্ষকরা বেতন তুলতে ব্যাংকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতেন। ইএফটির মাধ্যমে এটি অনেক সহজ হয়েছে।
২. স্বচ্ছতা: আগের মতো আর কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই, ফলে দুর্নীতির সুযোগ কমেছে।
৩. নির্ভরযোগ্যতা: নির্দিষ্ট তারিখে বেতন পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে।
একজন শিক্ষক, যিনি প্রথমবার এই সুবিধা পেয়েছেন, তিনি বলেন, “ইএফটি আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ। এখন আর দুশ্চিন্তা করতে হয় না, টাকা সরাসরি আমাদের অ্যাকাউন্টে চলে আসে।”
ইএফটি কার্যক্রমের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে সরকারের পরিকল্পনা আরও বৃহত্তর পরিসরে এই পদ্ধতি চালু করা। শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু বেতন নয়, শিক্ষকদের অবসরভাতা এবং অন্যান্য সুবিধাও পর্যায়ক্রমে এই পদ্ধতির আওতায় আনা হবে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
যদিও ইএফটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে। যেমন:
- কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা।
- সকল শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকা।
এই সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকার কাজ করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা উন্নত করতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে।
ইএফটি পদ্ধতি বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শিক্ষকদের জীবনকে সহজতর করে তুলবে এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ এবং দ্রুতগতির করবে। এমন উদ্যোগ শিক্ষার মানোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রযুক্তির এই ব্যবহার আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক এবং কার্যকর করে তুলবে বলে আশা করা যায়।