জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোর সময়সীমা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ শোনা যায়। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার্থীরা দাবি করে আসছিলেন যে, সময় কম থাকায় তারা ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ করতে পারেন না। অবশেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে ২০২২ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার সময়সীমা ৩০ মিনিট বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিয়েছে।
ডিগ্রি ৩য় বর্ষের সকল পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি ২০২৪
১১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে জানানো হয় যে, ২০২২ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের তৃতীয় বর্ষের সকল পরীক্ষার সময়সীমা ৩০ মিনিট বাড়ানো হয়েছে। একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে:
পরীক্ষার পূর্বের সময়সীমা | পরীক্ষার নতুন সময়সীমা |
---|---|
৩ (তিন) ঘন্টা | ৩ (তিন) ঘন্টা ৩০ মিনিট |
৩ (তিন) ঘন্টা ৩০ মিনিট | ৪ (চার) ঘন্টা |
ডিগ্রি ৩য় বর্ষের পরীক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটি একটি সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন যে, পূর্বে পরীক্ষার সময় কম থাকার কারণে তাদের উত্তরপত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হতো না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের এক শিক্ষার্থী জানায়,
“পরীক্ষার সময় বাড়ানোর ফলে আমরা উত্তরগুলো ভালোভাবে সাজিয়ে লিখতে পারবো। আগে সময়ের চাপে অনেক প্রশ্নের উত্তর অসম্পূর্ণ থেকে যেত।”
একইভাবে, চট্টগ্রামের একজন শিক্ষার্থী বলেন,
“এই সিদ্ধান্তটি আমাদের জন্য অনেক স্বস্তিদায়ক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি। সময় বৃদ্ধি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।”
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অনেক শিক্ষক মনে করেন যে, সময় বৃদ্ধির ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন পাবে।
একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক বলেন,
“আমরা প্রায়ই দেখি যে, পরীক্ষার্থীরা সময়ের অভাবে শেষ মুহূর্তে অগোছালোভাবে উত্তর লিখে। সময় বৃদ্ধি করলে তারা প্রতিটি প্রশ্নে আরও ভালো মনোযোগ দিতে পারবে।”
সমস্যার সমাধানে একটি পদক্ষেপ
পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক নয়, এটি পরীক্ষার মান বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। নিচে সময় বৃদ্ধির সুবিধাগুলো একটি চার্টে তুলে ধরা হলো:
পরীক্ষার সময় বৃদ্ধির সুবিধা | বর্ণনা |
---|---|
উত্তর গুছিয়ে লেখা সম্ভব | সময় বেশি পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা উত্তর গুছিয়ে লিখতে পারবে। |
মানসিক চাপ কমানো | কম সময়ের কারণে যে চাপ তৈরি হতো তা হ্রাস পাবে। |
পরীক্ষার মান উন্নয়ন | উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারবে। |
বিশুদ্ধতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বৃদ্ধি | সময় বেশি থাকায় তারা চিন্তাভাবনার সুযোগ পাবে। |
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত তাদের শিক্ষার্থীবান্ধব নীতিরই একটি উদাহরণ। বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপটি তারই ধারাবাহিকতা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে শুধু শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক এবং একাডেমিক উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যদিও সময় বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। যেমন:
- পরীক্ষা কেন্দ্রের সময়সূচি সমন্বয়
পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি করার ফলে বিভিন্ন সেশনের পরীক্ষার মধ্যে ব্যবধান কমে আসতে পারে। - পরীক্ষা গ্রহণের খরচ বৃদ্ধি
পরীক্ষার সময় বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত খরচের চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা পরিচালনা করতে কর্তৃপক্ষকে আরও দক্ষ হতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার্থীদের স্বস্তি দেবে এবং তাদের দক্ষতা ও জ্ঞানের সঠিক মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে। এই সিদ্ধান্ত শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নের জন্যও একটি বড় অবদান রাখবে।
পরীক্ষার সময় বৃদ্ধির এই নীতিকে কার্যকর করার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা এবং মনিটরিং প্রয়োজন। আশা করা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে সফল হবে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে।