Thursday, November 21, 2024
বাড়িশিক্ষা তথ্যশিক্ষা নিউজজলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষা খাতে এর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষা খাতে এর প্রভাব

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এর একটি বড় প্রভাব দেখা যাচ্ছে শিক্ষা খাতে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এর প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার ঘটনা বেড়ে চলেছে, যা কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

জলবায়ু পরিবর্তন

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে প্রায় ৪০ কোটি শিক্ষার্থী আবহাওয়ার কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এমনকি ২০২৪ সালেও আমরা এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। স্বল্প আয়ের দেশগুলোর শিশুরা বিশেষ করে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। এসব দেশে বিদ্যালয় গড়ে ১৮ দিন করে বন্ধ ছিল।

বাংলাদেশেও এর প্রভাব বেশ প্রকট। এ বছরের এপ্রিল মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কয়েকটি জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছিল, ফলে বিদ্যালয় চালু রাখা সম্ভব হয়নি। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, গত এপ্রিল মাসে ফিলিপাইনে প্রচণ্ড গরমের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার বিঘ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা সরাসরি তরুণদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মমতা মূর্তি উল্লেখ করেছেন যে, তরুণেরা এই সংকটের শিকার হচ্ছেন এবং এর কারণে তারা প্রয়োজনীয় শিক্ষা, দক্ষতা ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা তরুণদের জন্য যথেষ্ট কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে না, কারণ এটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুত করতে পারছে না।

আরও জানুন:  ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল ২০২৪ প্রকাশ হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, ২০২৪ সালে ১০ বছর বয়সী শিশুদের জীবনে বন্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা ১০৭০ সালের সমবয়সী শিশুদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। খরার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা পাঁচ গুণ এবং তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা ৩৬ গুণ বেশি। এর অর্থ, স্কুল খোলা থাকলেও অনেক শিশু এই জলবায়ু সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।

ব্রাজিলের মতো দেশগুলিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে অতি দরিদ্র ৫০ শতাংশ পৌরসভার শিক্ষার্থীরা বছরের অর্ধেক সময় পড়াশোনার বাইরে থাকে। কারণ, এসব অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তীব্র।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শিক্ষা খাতে অর্থায়নের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য এককালীন সাড়ে ১৮ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শ্রেণিকক্ষের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য অভিযোজন ব্যবস্থা। এসব পদক্ষেপ নিলে শিক্ষার্থীরা আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসবে।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে যে, এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে যে সংকট তৈরি হচ্ছে, তা আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই, শিক্ষার শক্তিকে কাজে লাগাতে হলে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

জলবায়ু পরিবর্তন কেনো হচ্ছে ?

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পরিকল্পনা

শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে শিক্ষার জন্য বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন করা জরুরি।

সরকারগুলোকে শিক্ষা খাতের সঙ্গে জলবায়ু বিষয়ক নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারে।

জলবায়ু অভিযোজন শিক্ষার অংশ হওয়া উচিত

জলবায়ু অভিযোজন শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শিক্ষার্থীদের জীবনকে যেমন প্রভাবিত করছে, তেমনি এটি তাদের ভবিষ্যতের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করছে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষার্থীদের এই সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা অত্যন্ত জরুরি।

আরও জানুন:  বড় পরিবর্তন: অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ২১ অক্টোবর, পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি তথ্য!

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে তাপপ্রবাহ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায়, সেখানে শিক্ষার্থীদের জলবায়ু বিষয়ে সচেতন করে তুলতে বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা উচিত। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কৌশল শিখতে পারবে এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি শিক্ষকদেরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। কারণ, শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের প্রথমত জলবায়ু সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন। শিক্ষকদের জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। তারা যাতে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়গুলো বোঝাতে পারেন এবং তাদের এই সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা উচিত।

এ ছাড়া, শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত শিক্ষা দিতে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উপকরণের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেটের সাহায্যে শিক্ষাদান এসব উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে।

অবকাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবকাঠামোগত সমস্যা। অনেক স্কুলে তাপমাত্রা সহনীয় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে এ সমস্যা বেশি। তাই, বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণিকক্ষের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া, বন্যা প্রবণ এলাকা এবং খরা প্রবণ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নত করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, এইসব পরিবর্তন আনতে শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের ফেরাতে এবং শিক্ষার মান বজায় রাখতে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন এখন আমাদের সময়ের একটি বড় সংকট। এর প্রভাব শুধু পরিবেশের ওপর নয়, শিক্ষা ক্ষেত্রেও পড়ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এই সংকট সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। তাই, জলবায়ু অভিযোজন এবং শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের ফেরানোর জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সমাজের সকল অংশের সহযোগিতা প্রয়োজন। শিক্ষার মাধ্যমে তরুণদের ক্ষমতায়িত করা এবং তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি।

আরও জানুন:  শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার: ২০১২ গ্রেডিং পদ্ধতি শিক্ষাক্রমে ফেরা!

এই সংকট মোকাবিলায় আমরা যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিই, তবে ভবিষ্যতে শিক্ষার মান আরও কমে যাবে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ✍ শিক্ষা সম্পর্কিত যেকনো তথ্য সবার আগে পেতে শিক্ষা নিউজকে অনুসরণ করুন। এছাড়া আমাদের হোয়াটসয়াপ চ্যনেলকে ফলো করে পাশে থাকুন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
WhatsUpBD Desk
WhatsUpBD Deskhttps://shikkha.whatsupbd.com
“Shikkha News” সঠিক তথ্যের প্লাটফর্ম। এখানে শিক্ষা সম্পৃক্ত সকল জানা ও অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। “শিক্ষা নিউজ” এর লক্ষ্য সবার মাঝে সঠিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া। যদি আপনি শিক্ষা বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে চান তাহলে নিয়মিত চোখ রাখুন শিক্ষা নিউজ ব্লগে।
RELATED ARTICLES

জনপ্রিয় পোষ্ট

Recent Comments