২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য সংশোধিত সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন এবং নম্বর বণ্টন প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি – NCTB) এই পরিবর্তনগুলো এনেছে, যা নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংশোধিত সিলেবাস ও নির্দেশনাগুলো সরকারি ও বেসরকারি সব স্কুলে পাঠানো হয়েছে। এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের নতুন ব্যবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সিলেবাস ও পরীক্ষার নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন আনার কারণ হলো শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে চাপ কমানো এবং শিক্ষাকে আরও আধুনিক করা। পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুটি পরিবর্তন আনা হলেও এর মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সহজ এবং কার্যকর পাঠ্যক্রম নিশ্চিত করা।
আগের শিক্ষাব্যবস্থায় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভাগ বিভাজনের (বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য) ভিত্তিতে পড়াশোনা করত। তবে গত সরকারের সময় চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে এই বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া হয়েছিল। এই পরিবর্তন শিক্ষার নতুন দিকনির্দেশনা হলেও অনেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক এতে মানিয়ে নিতে সমস্যার মুখোমুখি হন।
বর্তমান সরকার ২০২৫ সাল থেকে আবারও বিভাগ বিভাজন ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য সংশোধিত সিলেবাস এবং নম্বর বণ্টন সেই সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন।
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস PDF
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার মানবন্টন
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস
সংশোধিত নম্বর বণ্টনে বিষয়ভিত্তিক কিছু পরিবর্তন এসেছে। বিষয়গুলোতে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে এবং না থাকলে নম্বর বণ্টন ভিন্নভাবে করা হয়েছে। নম্বর বণ্টনের কাঠামো:
বিষয় | রচনামূলক অংশ | বহুনির্বাচনি অংশ | ব্যবহারিক অংশ | মোট নম্বর |
---|---|---|---|---|
ব্যবহারিক ছাড়া বিষয় | ৭০ নম্বর | ৩০ নম্বর | – | ১০০ নম্বর |
ব্যবহারিকসহ বিষয় | ৪০ নম্বর | ২৫ নম্বর | ২৫ নম্বর | ১০০ নম্বর |
এই কাঠামো অনুযায়ী, ব্যবহারিক না থাকা বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ৭০ এবং বহুনির্বাচনি অংশে ৩০ নম্বর থাকবে। আর ব্যবহারিক থাকা বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ৪০, বহুনির্বাচনি অংশে ২৫ এবং ব্যবহারিক অংশে ২৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশোধিত সিলেবাসে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে বাংলা বিষয়ে আনা পরিবর্তন। মাত্র পাঁচ দিন আগে প্রথমবারের মতো সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপযোগিতা এবং পরীক্ষার কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য তা আবার সংশোধন করা হয়েছে। বাংলা বিষয়ের নতুন সিলেবাসে লেখার দক্ষতা, ব্যাকরণ এবং সাহিত্য অংশে ভারসাম্য রাখা হয়েছে। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, রচনা এবং ব্যাকরণ অংশে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি নম্বর পেতে হলে সৃজনশীলভাবে কাজ করতে হবে।
সংশোধিত ২০২৬ সালের এসএসসি সিলেবাসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সংশোধিত সিলেবাস শিক্ষার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং বাস্তব জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে বহুনির্বাচনি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যাচাই করা হবে। নতুন সিলেবাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো পরীক্ষার ফলাফলের মান উন্নয়ন। নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন এনে পরীক্ষাকে সহজ এবং বাস্তবসম্মত করা হয়েছে।
২০২৬ সালের এসএসসি শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি
সংশোধিত সিলেবাস মানিয়ে নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নতুন কাঠামোতে প্রস্তুতি নিতে তাদের কৌশলী হতে হবে।
পরীক্ষার ধরন বুঝতে হবে: শিক্ষার্থীদের নতুন সিলেবাস এবং নম্বর বণ্টন ভালোভাবে বুঝে প্রস্তুতি নিতে হবে।
নম্বর বণ্টনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া: রচনামূলক এবং ব্যবহারিক অংশে ভালো করতে হলে নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই।
গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় চিহ্নিত করা: সিলেবাসের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পড়তে হবে।
শিক্ষক এবং অভিভাবকদের জন্যও এই পরিবর্তনগুলো মানিয়ে নেওয়া জরুরি। শিক্ষার্থীদের নতুন কাঠামোতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা দেওয়া। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের মনোযোগ ধরে রাখতে সহযোগিতা করা। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার সংশোধিত সিলেবাস এবং নম্বর বণ্টন শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন দিকচিহ্ন তৈরি করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি শিক্ষকদের জন্যও নতুন দায়িত্ব।
এই পরিবর্তনগুলো যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে তা শিক্ষাব্যবস্থার মান আরও উন্নত করবে। শিক্ষার্থীরা নতুন কাঠামোর সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারলে তাদের সাফল্যের পথ সুগম হবে। সংশোধিত সিলেবাস শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই প্রত্যাশা।