গরু আমাদের প্রিয় গৃহপালিত প্রাণী। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গরু সাধারণত শান্ত স্বভাবের হয় এবং খুবই সহনশীল প্রাণী। এগুলো আমাদের অনেক কাজে সাহায্য করে। যেমন, গরুর দুধ থেকে আমরা পুষ্টিকর খাবার যেমন দই, ঘি, মাখন ইত্যাদি তৈরি করতে পারি। এছাড়া গরুর গোবর আমাদের কৃষিকাজে কাজে লাগে এবং এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী। গরু সবুজ ঘাস, খড়, এবং নানা ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করে। এই খাবারগুলি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গরু সাধারণত মাঠে মুক্তভাবে চরতে ভালোবাসে, তবে অনেক সময় এদেরকে খোঁয়ার মধ্যে রাখা হয় যাতে তারা ভালোভাবে খাবার খেতে পারে। গরু যখন আরাম করছে বা বিশ্রাম নিচ্ছে, তখন এরা সাধারণত খুব শান্ত থাকে।
গরুর রচনা চতুর্থ শ্রেণীর
গরু আমাদের শুধু খাদ্য উৎপাদনেই সাহায্য করে না, বরং কৃষি কাজেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গরুর দুধ এবং গোবর কৃষি ও বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। গরু আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমাদের সমাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
সূচনা
মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির সাথে দীর্ঘকাল ধরে যে প্রাণী আমাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করে আসছে, তার নাম গরু। গরু একান্তই শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির প্রাণী, যা মানুষের জন্য নীরবে কাজ করে যায়। যদিও এই প্রাণী কোনো কিছু প্রত্যাশা করে না, তবুও মানুষের জীবনে এর ভূমিকা অপরিসীম। প্রাথমিকভাবে গরু ছিল বন্য, কিন্তু মানুষের প্রয়োজনের কারণে এটি ধীরে ধীরে গৃহপালিত হয়ে ওঠে। সেই সময় থেকেই গরু আমাদের ভালোবাসা ও মমতা লাভ করেছে। শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নয়, গরু আমাদের অর্থনীতি, কৃষি, এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আকৃতি ও প্রকৃতি
গরু একটি গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী। এর উচ্চতা প্রায় তিন থেকে চার হাত এবং দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে ছয় হাত হয়ে থাকে। গরুর মুখ লম্বাকৃতির, এবং মাথায় দুটি শিং থাকে। তার চোখ দুটি বড় এবং কালো হয়, এবং কান দুটি দীর্ঘ। গরুর শরীরের পেছনে একটি লম্বা লেজ থাকে, এবং তার গলায় ঝুলন্ত চামড়া থাকে, যা গলকম্বল নামে পরিচিত। গরুর পুরো শরীর ছোট এবং ঘন লোমে আবৃত। পায়ের খুর দুটি বিভক্ত। মুখের নিচের মাড়িতে একটি পাটি দাঁত থাকে। গরু বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে, যেমন সাদা, কালো, লাল এবং কিছু কিছু গরু মিশ্র বর্ণের হয়ে থাকে।
প্রকৃতি
গরু অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির প্রাণী। তবে, স্ত্রী এবং পুরুষ গরুর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। গাভী সাধারণত প্রতি বছর একটি বাচ্চা প্রসব করে, এবং মা গাভী তার বাচ্চাকে অনেক স্নেহ করে। যদি কেউ তার বাচ্চার কাছে যায়, গাভী শিং দিয়ে ভয় দেখায়। পুরুষ গরু বা ষাঁড় সাধারণত বেশি রাগী হয়। তারা নিজেদের মনোভাব “হাম্বা” শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে। গরুর গড় আয়ু সাধারণত ১৫ থেকে ২০ বছর হয়, এবং সুস্থ অবস্থায় দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে পারে।
খাদ্য
গরু একটি তৃণভোজী প্রাণী, যা মূলত ঘাস খায়। তবে, এর খাদ্য তালিকায় গাছের পাতা, শুকনো খড়, ভুসি, খৈল, কলাই এবং ভাতের ফেনও থাকে। গরু খাওয়ার সময় প্রথমে খাবারটি গিলে ফেলে, পরে বিশ্রামের সময় সেই খাবার মুখে নিয়ে এসে আবার ভালোভাবে চিবিয়ে খায়। এই প্রক্রিয়াকে “জাবর কাটা” বলা হয়।
গরুর উপকারিতা
গরু অন্যান্য পশুদের তুলনায় অনেক বেশি উপকারী। এর দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। অনেক সময়, গরুর দুধ মানবশিশুর মায়ের দুধের অভাব পূরণ করতে সক্ষম। গরুর দুধ থেকে নানা ধরনের খাবার তৈরি করা যায়, যেমন দই, ছানা, মাখন, ঘি, পনির, ক্ষীর এবং মিষ্টি। এগুলো স্বাস্থ্য জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া গোময় বা গোবর একটি আদর্শ সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেকেই গোবর দিয়ে ঘুঁটে তৈরি করে, যা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গরুর শিং এবং খুর দিয়ে শিরিষ আঠা তৈরি করা যায়। ষাঁড় এবং বলদ জমিতে লাঙল বা গাড়ি টানতে কাজে আসে। একসময়, কৃষকরা জমি চাষ করার জন্য গরু ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ভাবতে পারত না।
গরুর প্রাপ্তিস্থান
গরু পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। তবে, বাংলাদেশের গরু অন্যান্য দেশের গরুর তুলনায় কিছুটা ছোট। ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড এবং আমেরিকার গরু বড় এবং শক্তিশালী হয়। পৃথিবীতে বুনোগরুও রয়েছে, যেগুলি সাধারণত হিংস্র প্রকৃতির হয়। বাংলাদেশের সুন্দরবন এবং অন্যান্য অঞ্চলে এই বুনোগরু দেখা যায়, যার মধ্যে নীল গাই অন্যতম।
গরুর রোগ
গরু বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যেমন পেটফুলা, তড়কা, খুরারোগ, গোবসন্ত, গলাফুলা ইত্যাদি। এসব রোগ গরুর শারীরিক দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে প্রাণীটি গুরুতর অসুস্থ হতে পারে।
উপসংহার
গরু আমাদের অনেক উপকার করে, কিন্তু আমরা তার প্রতি যথেষ্ট যত্ন নিই না। গরুকে কম খাওয়ানো এবং অত্যধিক পরিশ্রম করানো হয়, যার ফলে তারা দুর্বল এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর ফলে, আমাদের দেশি গরু বিদেশি উন্নত জাতের গরুর তুলনায় কম দুধ দেয়। এছাড়া আমাদের দেশে অনেক সময় আলাদা গোচারণ ভূমি নেই, এবং অসুস্থ গরু প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। গরুর মতো এমন কোনো পশু নেই যা আমাদের এত উপকারে আসে। যদি আমরা গরুর প্রতি সহানুভূতিশীল হই এবং সঠিক যত্ন নেব, তবে গরু শক্তিশালী হয়ে দুধ দিবে আরও বেশি। গরুপালন একটি লাভজনক ব্যবসা, এবং বর্তমানে সরকার সংকর প্রক্রিয়া ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত গরু পালনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই গরুর প্রতি আমাদের যত্নশীল এবং সদয় হওয়া উচিত, কারণ এটি আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।