বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে। এ বছরের দাখিল পরীক্ষা আগামী ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১২ মে পর্যন্ত চলবে। এরপর ১৪ মে থেকে শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। দাখিল পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মাঝে এখন থেকেই প্রস্তুতির এক ধরনের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে।
এই প্রবন্ধে দাখিল পরীক্ষার রুটিন, সময়সূচি, পরীক্ষার নিয়মাবলী এবং নির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। যারা দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে সহায়ক হবে।
মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার রুটিন ২০২৫
২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষা ১০ এপ্রিল শুরু হবে এবং ১২ মে শেষ হবে। প্রথম দিনে কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে। এরপর ১৪ মে থেকে শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা, যা ১৮ মে শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী, প্রতিটি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত পূর্ণ সময় ও পূর্ণ মান নিশ্চিত করা হয়েছে। পরীক্ষার সময়সূচি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
তত্ত্বীয় পরীক্ষাগুলো ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ধারাবাহিকভাবে নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী চলবে। এই পরীক্ষাগুলো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য সময়সীমা ১৪ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে সব ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।
মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে, যা তারা মেনে চলতে বাধ্য।
- পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের সময়
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। এটি সময়মতো উপস্থিত থাকার গুরুত্ব বোঝায় এবং পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়। - ক্যালকুলেটর ব্যবহার
পরীক্ষার্থীরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ক্যালকুলেটর বা স্মার্ট ক্যালকুলেটর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। - মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ
পরীক্ষার সময় কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। এটি প্রশ্ন ফাঁস রোধ এবং পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
মাদ্রাসার দাখিল প্রশ্নের পূর্ণমান ও পূর্ণ সময়
২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষা প্রশ্নের পূর্ণমান এবং পূর্ণ সময় অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। বিগত বছরগুলোতে কখনো কখনো পরীক্ষার পূর্ণ সময় বা পূর্ণমান কমানো হয়েছিল। তবে এবারের পরীক্ষা নিয়মিত সময় ও পূর্ণমান অনুযায়ী হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়, সে জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো বহিরাগত কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। ব্যবহারিক পরীক্ষার মধ্যে সাধারণত ল্যাবরেটরি কাজ বা হাতে-কলমে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের এর জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য দাখিল পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি মাধ্যমিক পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষা। দাখিল পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তী শিক্ষাজীবনের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়া খুবই জরুরি।
- পরীক্ষার রুটিন বুঝে পড়াশোনা
প্রথমে পরীক্ষার রুটিন দেখে প্রতিটি বিষয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করুন। কোনো বিষয়কেই অবহেলা করা উচিত নয়। - পর্যাপ্ত সময় নিয়ে রিভিশন
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রতিটি অধ্যায়ের রিভিশন নিশ্চিত করুন। এটি আপনাকে প্রশ্নের উত্তর দ্রুত এবং সঠিকভাবে দিতে সহায়তা করবে। - ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য আলাদা প্রস্তুতি
ব্যবহারিক পরীক্ষা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ল্যাবের কাজগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করুন।
অভিভাবকদের দায়িত্ব
পরীক্ষা চলাকালীন সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে অভিভাবকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের জন্য একটি সুশৃঙ্খল পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা। পাশাপাশি, সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং তাদের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
পরীক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শিক্ষকরা যেন নিয়মিত ক্লাস নেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন, তা নিশ্চিত করা উচিত। তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক উভয় পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে প্রস্তুত করার দায়িত্ব শিক্ষকদের।
২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সময়মতো রুটিন প্রকাশিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন থেকে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। পরীক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী থেকে নিয়মিত অধ্যবসায় চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দাখিল পরীক্ষার রুটিন, নির্দেশনা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো যথাযথভাবে মেনে চললে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন সম্ভব হবে। সবার জন্য শুভকামনা।