কীর্তিমান ব্যক্তির মৃত্যু হয় না, এবং তাদের কীর্তিও কখনো নিঃশেষ হয় না। পৃথিবীতে তারা তাদের কাজের গুণে অমর হয়ে থাকেন। যারা এই জগতে সফল হয়েছেন, তারা সবাই ছিলেন পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী। সাফল্য পাওয়ার জন্য তাদের বারবার চেষ্টা ও সংগ্রাম করতে হয়েছে, যা আসলে অধ্যবসায়ের পরিচয়।মানুষ ভুল করে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কোনো কাজের ব্যর্থতা বা অপ্রাপ্তি তাকে হারিয়ে যেতে দেয় না। সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে নিরলস প্রচেষ্টা, একাগ্রতা এবং নিষ্ঠা প্রয়োজন, সেটাই হলো অধ্যবসায়। সাফল্য আসতে সময় নেয়, কিন্তু যারা অধ্যবসায়ী তাদের জন্য কখনো হাল ছাড়ার প্রশ্ন আসে না। তাদের একান্ত ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার ফলে তারা শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছায়।
অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট
অধ্যবসায়ী ব্যক্তিরা জানেন, তাদের লক্ষ্য বড় এবং কঠিন হতে পারে, কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা এবং মনোভাবই তাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং, অধ্যবসায় হচ্ছে সেই শক্তি, যা মানুষকে বাধা অতিক্রম করতে সহায়তা করে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ভূমিকা
কীর্তিমান মানুষদের মৃত্যু নেই, তারা চিরকাল অমর হয়ে থাকেন তাদের কাজের মাধ্যমে। পৃথিবীতে তাদের কীর্তি এমনভাবে প্রতিফলিত হয় যে, তারা কখনোই হারিয়ে যান না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বহু মানুষ আছেন যারা নিজেদের অধ্যবসায় ও সংগ্রামের মাধ্যমে কীর্তি সৃষ্টি করেছেন। সাফল্য অর্জন করার জন্য যে একাগ্র প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও অধ্যবসায় দরকার, তা-ই এই মানুষদের জীবনে দৃঢ়ভাবে উপস্থিত ছিল। মানুষ যাই হোক না কেন, ভুলের মধ্যে দিয়ে শিখে এবং বারবার চেষ্টা করে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নামই অধ্যবসায়।
অধ্যবসায় কী
অধ্যবসায় হলো একটি বিশেষ গুণের সম্মিলন, যা গঠিত হয় চেষ্টা, উদ্যোগ, পরিশ্রম, ধৈর্য ও আন্তরিকতা দিয়ে। যখন কেউ কোনো কাজ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়, কিন্তু তারপরও সে তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা নিয়ে আবার চেষ্টা চালিয়ে যায়, সেটিই হচ্ছে অধ্যবসায়। এর মানে হলো, নিজের মনোবল ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে, পুনরায় চেষ্টা করা এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো।
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা
জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি আসতে পারে, কিন্তু সেই বাধাকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়া কাপুরুষতার লক্ষণ। যারা সঙ্কোচ বা সংশয়ে ভোগে, তারা সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে না। যেমন, রাতের অন্ধকারের পর আলো আসে, ঠিক তেমনি নিরন্তর চেষ্টার মাধ্যমে মানুষ তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। সফলতার জন্য কষ্ট ও সংগ্রাম অপরিহার্য। পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও অন্যান্য ব্যক্তিত্বরা ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং অধ্যবসায়ী। অধ্যবসায় ছাড়া কোনো জাতি বা দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।
অধ্যবসায়ের উদাহরণ
বিশ্বের বড় বড় সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, সেনানায়ক ও ধর্মপ্রবর্তকের জীবনে অধ্যবসায়ের বড় উদাহরণ রয়েছে। মহাকবি ফেরদৌসি তার জীবনের এক বিশাল সময়, প্রায় তিরিশ বছর ধরে রচনা করেছিলেন ‘শাহনামা’। একইভাবে জ্ঞানেন্দ্রমোহন দীর্ঘ একক প্রচেষ্টায় বাঙলা ভাষার অভিধান রচনা করেন, যা পঞ্চাশ হাজার শব্দের বিশাল এক সংগ্রহ। আবার আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই, নিজের একাগ্র প্রচেষ্টায় সংগ্রহ করেছিলেন হাজার হাজার পুরনো পুঁথি, যা বাংলার ইতিহাসের অজানা অধ্যায়গুলোকে উন্মোচন করে দেয়।
অধ্যবসায়ীর জীবনদর্শন
জীবনে সাফল্য অর্জন করার জন্য অধ্যবসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের এক মহান ব্যক্তিত্ব নেপোলিয়ন, যিনি ছিলেন আধিকারিক এবং সফল সেনানায়ক, তিনি তার জীবনের মধ্যে চিত্রিত করেছেন অধ্যবসায়ের এক অনন্য উদাহরণ। তিনি কোন কাজকেই অসম্ভব মনে করতেন না এবং তা সত্যিই তার জীবনে প্রতিফলিত হয়েছিল। এজন্যই তিনি ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হয়ে ওঠেন। শুধু অধ্যবসায়ের কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
যে জাতি যত বেশি অধ্যবসায়ী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। আমাদের জীবনেও অধ্যবসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা আসবে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে, তা ব্যক্তিগত জীবনই হোক বা জাতীয় জীবন। উদাহরণ হিসেবে জাপানকে নেওয়া যেতে পারে, যাদের দেশের মানুষের অধ্যবসায়ের ফলে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। চীনও একই পথে হাঁটছে এবং গত কয়েক দশকে চীনের মানুষ নিজেদের দারিদ্র্য কাটিয়ে অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কোনো দেশের উন্নতির জন্য প্রয়োজন প্রতিটি নাগরিকের অধ্যবসায় এবং পরিশ্রম। একটি জাতি যখন এভাবে একযোগে কাজ করে, তখন তার জাতীয় জীবনেও উন্নতি আসে।
উপসংহার
অধ্যবসায়ী ব্যক্তিরা জীবনে কোনো সাধারণ কাজেও সফলতা লাভ করতে সক্ষম হয়। তাই জীবনের সাফল্য ও বিফলতা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের অধ্যবসায়ের উপর। অধ্যবসায় ছাড়া সফলতা প্রায় অসম্ভব। তাই আমাদের উচিত, এই মহৎ গুণটিকে নিজের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা। মনে রাখতে হবে, অধ্যবসায়ই জীবনের মূল শক্তি এবং জীবনই হলো অধ্যবসায়।