শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার: ২০১২ গ্রেডিং পদ্ধতি শিক্ষাক্রমে ফেরা!

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন যেন একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি আবারো গ্রেডিং পদ্ধতি ও ৩ ঘণ্টা সময়সীমার পরীক্ষা ব্যবস্থা ফিরে আসছে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় আবারও বিভাগ বিভাজন চালু করা হবে। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) বলেছে, ২০২১ সালে চালু করা শিক্ষাক্রম ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তাই ২০১২ সালের সৃজনশীল পদ্ধতিতে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

২০১২ গ্রেডিং পদ্ধতি শিক্ষাক্রমে ফেরা

২০১২ সালে শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল, যা শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালে চালু করা নতুন শিক্ষাক্রমে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা বিভিন্ন সমালোচনা করেন। শিক্ষাবিদরা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে পরীক্ষার জন্য মুখস্থ করার দিকে ঝুঁকছিল।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. একে এম রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০২১ সালের শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এমনকি শিক্ষকরাও এই শিক্ষাক্রমের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় নিয়মিত পরিবর্তন জরুরি। কিন্তু একবার নতুন কিছু চালু করার পর তা বন্ধ করে পুরোনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, “পুরোনো শিক্ষাক্রম চালু করার অর্থ হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করা। নতুন কিছু চালু করলে তার উপকারিতা এবং সমস্যা দুই দিকই বিবেচনা করা উচিত।”

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করতে হলে তা সঠিকভাবে পরীক্ষা করা উচিত। নতুন কিছু চালু করা বা পুরোনো পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা, কোনোটাই আচমকা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়।

২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের সুবিধা

২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল চিন্তা করতে শিখেছিল। তারা মুখস্থ বিদ্যার বাইরে গিয়ে বিষয়বস্তু বুঝতে পারত। সেই সময় শিক্ষকদেরও শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করতে পারেন। কিন্তু ২০২১ সালের শিক্ষাক্রমে এই সুযোগটি অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল।

শিক্ষাবিদ ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, “আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন একটি পদ্ধতি প্রয়োজন যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সহায়ক হবে। পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে গেলে আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়তে পারি।”

২০২১ শিক্ষাক্রমের সমস্যাগুলো কী ছিল ?

২০২১ সালে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা ছিল। শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করতে পারছিল না বলে অভিযোগ উঠেছিল। অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী মনে করেন, এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগ বিভাজন বাদ দেওয়া হয়েছিল, যা শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল।

শিক্ষকরা মনে করেন, নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের শুধু মুখস্থ বিদ্যা শেখানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল চিন্তা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। শিক্ষার্থীরা কেবল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য পড়াশোনা করছিল, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করছিল না।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা পরিকল্পিত এবং গবেষণার ভিত্তিতে হতে হবে। শুধুমাত্র পুরোনো পদ্ধতি ফিরে এনে সমস্যার সমাধান হবে না। এর জন্য প্রয়োজন নতুন এবং কার্যকরী পদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত করবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর চেয়ারম্যান ডা. একে এম রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চাহিদা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে শিক্ষাক্রম তৈরি করা উচিত।”

গ্রেডিং পদ্ধতির ফিরে আসা

গ্রেডিং পদ্ধতি আবারো ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, এই পদ্ধতি তাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো করতে সাহায্য করবে। আবার অনেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক মনে করেন, এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের কেবল ভালো গ্রেড অর্জনের দিকে ধাবিত করবে, বিষয়বস্তুতে গভীরতা আনবে না।

শিক্ষাবিদ ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, “গ্রেডিং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তারা ভালো গ্রেড অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করে, কিন্তু বিষয়টি সঠিকভাবে শেখার দিকে মনোযোগ দেয় না।”

শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা পরিকল্পনা অনুযায়ী হওয়া উচিত। পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার ফলে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে না। পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হতে হবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা। শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

শিক্ষাক্রম পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন এবং কর্মজীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া বা ২০২১ সালের শিক্ষাক্রম বাতিল করা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা আরও বিশদ গবেষণা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন যুগোপযোগী হওয়া উচিত এবং শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জনে সহায়তা করা উচিত।

শিক্ষাব্যবস্থায় পুনরায় ২০১২ সালের পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে পরিবর্তন এবং উন্নতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নিয়মিত অংশ হওয়া উচিত। যেকনো শিক্ষাতথ্য সবার আগে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।

হাই, আমি অনির্বান। আমি একজন প্রফেশনাল ব্লগ রাইটার। শিক্ষা সম্পর্কিত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।